-- বিজ্ঞাপন ---

ড. ইউনুসের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ চান টিউলিপ সিদ্দিক, কি লিখেছে গার্ডিয়ান

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন। এর আগে বহুল আলোচিত টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে রবিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান । যেখানে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক দেখা করতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ব্রিটিশ সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস–এর সঙ্গে লন্ডন সফরের সময় সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন, যাতে তার পদত্যাগের পেছনে থাকা “ভুল বোঝাবুঝি” দূর করা যায়। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

টিউলিপ সিদ্দিকের খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয় যে, টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সুবিধা পেয়েছেন।

মিডিয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)–এর দাবি— টিউলিপ সিদ্দিক বা তার মা “ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে” ৭,২০০ বর্গফুট জমির মালিকানা পান। টিউলিপ সিদ্দিক এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা বলেছেন, এসব অভিযোগ “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন।” টিউলিপ জানিয়েছেন, কোনো কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীসভার নীতিমালাবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তদন্ত শেষে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। তবে এই বিতর্ক কেয়ার স্টারমারের নতুন সরকারের জন্য “একটি বিভ্রান্তি” হয়ে উঠেছে বলে তিনি ট্রেজারির ইকোনমিক সেক্রেটারি ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা মুহাম্মদ ইউনুস–এর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে, সিদ্দিক অনুরোধ করেছেন যেন তার লন্ডন সফরের সময় এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, ড. ইউনুস এ সফরে রাজা চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার–এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।

চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, তিনি আশা করেন, এই সাক্ষাৎ “ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রচারিত ভুল ধারণা দূর করতে সাহায্য করবে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, আমার খালার (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আমার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে।”

তিনি আরও লিখেছেন, “আমি একজন যুক্তরাজ্যের নাগরিক, লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছি এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। আমার বাংলাদেশে কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। দেশটি আমার হৃদয়ের কাছাকাছি হলেও সেটি আমার জন্মভূমি নয়, আমি সেখানে বসবাস করি না এবং আমার কর্মজীবনও সেখানে গড়ে ওঠেনি।” তিনি জানান, এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (ACC) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারা তার লন্ডনের আইনজীবীদের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করছে না এবং ঢাকায় “একটি এলোমেলো ঠিকানায়” চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছে।

টিউলিপ বলেন, “এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ আগে থেকেই মিডিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অথচ আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো সংলাপের সুযোগই দেওয়া হয়নি। আমি জানি আপনি বুঝতে পারবেন, কীভাবে এসব প্রতিবেদন আমার নির্বাচনী এলাকাবাসীর জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।”

দুদক এরইমধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এই অভিযোগগুলোর উৎস ববি হাজ্জাজ, যিনি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

টিউলিপ দাবি করেন, তিনি একটি “রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত smear campaign”-এর শিকার, যা তার খালার বিরোধীরা পরিচালনা করছে।

গত মাসে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং কোথাও হাজিরার কোনো নির্দেশ পাননি। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ 2B ধরনের বহিঃসমর্পণ চুক্তির অংশ হওয়ায়, যুক্তরাজ্যের বিচারক ও মন্ত্রীদের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ না এলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না।

গত বছর যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজে থেকেই মন্ত্রী নৈতিক নীতিমালা উপদেষ্টার কাছে যান। তদন্ত শেষে জানুয়ারি মাসে তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। লরি ম্যাগনাস বলেন, টিউলিপের সম্পদ যে বৈধ উপায়ে অর্জিত, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে তিনি আরও বলেন, “তার পারিবারিক সংযোগের কারণে যে সুনামের ঝুঁকি ছিল, তা আরও ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত ছিল তার।”

তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে তার মস্কো সফর নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়, যেখানে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। সেসময় মিডিয়ায় দাবি ওঠে যে, টিউলিপ ওই চুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। তবে উপদেষ্টা ম্যাগনাস তার ব্যাখ্যা গ্রহণ করেন যে, তিনি তখন সেখানে ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণ করছিলেন, এবং কোনো সরকারি ভূমিকায় ছিলেন না।

গত মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের লন্ডনের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে, যেগুলোর মালিক শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজন ব্যক্তি।
উল্লেখ্য, টিউলিপ ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেত্রী। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সের নির্বাচনে চার বার জয়ী হয়েছেন তিনি। ব্রিটেনে সিটি মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজ়ারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার)-ও ছিলেন।
##সূত্র: The Guardian

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.