আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় আয়োজন হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ “আরাফাত দিবস” পালিত হয়েছে। ফজরের আগেই হাজার হাজার হাজি মক্কার নিকটবর্তী আরাফাতের ময়দানে জমায়েত হন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বিদায়ী হজের সময় তাঁর শেষ খুতবা প্রদান করেছিলেন।
এ বছর হজ পালন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ লাখের বেশি হাজি সৌদি আরবে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সূর্যোদয়ের আগেই আরাফাতে পৌঁছান, কেউ কেউ রঙিন ছাতা নিয়ে প্রস্তুত থাকেন গরম মোকাবেলায়। সাদা ইহরাম পরে হাজিরা দিনের বেশিরভাগ সময় আরাফাতের ময়দানে ইবাদত, দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াতে কাটান।
দিনের শেষে তারা আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন, যেখানে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জন্য কংকর সংগ্রহ করা হবে। এরপর তাঁরা মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
গরমে সতর্কতা ও নিরাপত্তা জোরদার
চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের প্রচণ্ড গরমে হজ পালনকে নিরাপদ করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০২৪ সালের হজে ১,৩০১ হাজির মৃত্যু হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ছিলেন অঅনুমোদিত হাজি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবছর গরম মোকাবেলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সৌদি আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আরাফাতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানানো হয় হাজিদের প্রতি। আরাফাতের পাদদেশে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক ঠাণ্ডা বাতাস ও কুয়াশা ছড়ানো যন্ত্র। ছায়াযুক্ত এলাকাও বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫০ হাজার বর্গমিটার পর্যন্ত।
দুই লাখের বেশি কর্মী নিয়োজিত
হজ পরিচালনার জন্য ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা থেকে ২,৫০,০০০ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে অতিরিক্ত হাজার হাজার চিকিৎসক প্রস্তুত রাখা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে ৪০০-এর বেশি শীতলীকরণ ইউনিট।
নিবন্ধনবিহীন হাজিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
গত বছরের মতো যেন এবার কোনো প্রাণহানি না ঘটে, সে লক্ষ্যে এবার নিবন্ধনবিহীন হাজিদের প্রবেশ ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। ড্রোন, নজরদারি ক্যামেরা, মোবাইল টেক্সট বার্তা এবং টহল দলের মাধ্যমে তাদের আটকানো হচ্ছে।
হজ পালনে আবেগঘন অভিজ্ঞতা
পাকিস্তানের ৩৩ বছর বয়সী হাজি আলি বলেন, “এই দৃশ্য আগে শুধু টিভিতে দেখতাম। আজ নিজ চোখে দেখে মনে হচ্ছে আমার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।” সিরিয়ার হাজি আদেল ইসমাইল বলেন, “গরম এড়াতে সকালেই আমি এখানে এসেছি, পরে আমি তাঁবুর ভেতরে নামাজ পড়ব।”
মিশরের ৫০ বছর বয়সী ইমান আবদেল খালেক বলেন, “এই হজে অংশ নেওয়া ছিল আমার ১০ বছরের স্বপ্ন। ভাবছিলাম হয়তো আর পারব না। আজ আরাফাতে পৌঁছে আমি কেঁদে ফেলেছি।”## ছবিঃ এএফপি’র সৌজন্যে
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.